ভোগ নিবেদনের সংক্ষিপ্ত নিয়ম
ভোগ নিবেদনের সংক্ষিপ্ত নিয়ম
বিগ্রহ অর্চনের খুঁটিনাটি বিষয় ইস্কন থেকে প্রকাশিত 'পঞ্চরাত্র-প্রদীপ' নামক গ্রন্থে রয়েছে। আগ্রহী ভক্তরা সেখান থেকে সব জানবেন। এখানে ভোগ নিবেদনের সংক্ষিপ্ত নিয়ম সম্বন্ধে কিছু নির্দেশ দেওয়া হল।
পূজারীকে অবশ্যই শুদ্ধভাবে জীবন যাপন করতে হবে। নিয়মিত সংখ্যানাম জপ করা, ইস্কনের চারটি নিয়ম (চা, পান, বিড়ি ইত্যাদি নেশা বর্জন, আমিষ বর্জন; অবৈধ যৌনসঙ্গ বর্জন এবং তাস জুয়া বর্জন) অবশ্যই মেনে চলতে হবে। গৃহস্থদের পক্ষে সাধারণতঃ গৌর-নিতাই বিগ্রহ বা আলেখ্যের সেবা করাই সুবিধাজনক।
স্নান করে পবিত্র কাপড় পরে শুদ্ধভাবে ভোগ রান্না করতে হবে। ভোগ নিবেদনের সময় পুরুষদের খালি গায়ে নামাবলী পরে এবং পবিত্র ধুতি (মহিলাদের পক্ষে শাড়ি) পরে ভোগ নিবেদন করতে হবে।
১। নিবেদনের আগে বিগ্রহের সামনে খানিকটা স্থান কিংবা একটি ছোট চৌকি জল দিয়ে লেপে নিন। হাত ধুয়ে বিগ্রহের জন্য নির্ধারিত থালা-বাসন (সেগুলি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না) ধুয়ে পবিত্র কাপড় দিয়ে মুছে নিন। সুন্দর করে হাতার মাধ্যমে (সরাসরি হাত না দিয়ে) পৃথক পৃথক বাটিতে ভোগ সাজান। প্রতিটি বাটিতে তুলসী পাতা দিন। আচমন করে গুরুকে প্রণাম করুন। পবিত্র রুমালে ঢেকে ভোগ বিগ্রহের সামনে চৌকিতে বসান। পর্দা বা দরজা বন্ধ করুন। আপনার হাত ধুয়ে শ্রীবিগ্রহের হস্তমুখ প্রক্ষালন করুন এবং রুমাল সরান।
২। মহামন্ত্র জপ করে পঞ্চপাত্র থেকে ভোগের উপর সামান্য জল ছিটিয়ে ভোগ শুদ্ধ করুন।
৩। ভোগ বেদীর সামনে একটি কুশাসনে বসুন। ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ৩ বার গুরুপ্রণাম মন্ত্রটি বলুন-
নমো ওঁ বিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে।শ্রীমতে (গুরুদেবের নাম) ইতি নামিনে ॥
এই মন্ত্র জপ করার সময় বিগ্রহ সেবায় গুরুদেবকে সাহায্য করার জন্য তাঁর অনুমতি প্রার্থনা করবেন।
এবার মহাপ্রভুর কৃপা প্রার্থনা করে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি ৩ বার বলুন-
"নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেম প্রদায় তে।কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্যানাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ৷"
অবশেষে ভক্তি সহকারে শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম মন্ত্রটি ৩ বার বলুন
"ওম ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ|জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ॥"
৪। মন্দিরের বাইরে এসে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সেই সময়ে শ্রীবিগ্রহ ভোগ গ্রহণ করবেন। এই অবসরে আপনি গুরু গায়ত্রী এবং গৌরাঙ্গ গায়ত্রী (গুরুপ্রদত্ত ৩য় ও ৫ম গায়ত্রী) জপ করুন। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র বা কোনও বৈষ্ণব ভজনও গাইতে পারেন।
৫। তিনবার হাততালি বাজিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করুন। বিগ্রহের কাছে প্রার্থনা করুন যেন ভগবান এবং তাঁর পার্যদেরা আপনার অপরাধ ক্ষমা করে পূর্ণরূপে প্রসন্ন হন। ঘণ্টা বাজিয়ে পুনরায় বিগ্রহের হস্তমুখ প্রক্ষালন করুন এবং ভোগ সরিয়ে সেই স্থানটি জল দিয়ে লেপে দিন।
পর্দা খুলে বিগ্রহকে অন্ততপক্ষে ধূপ নিবেদন করুন।
বাড়িতে অনেক সময় নিয়মিত ভোগ নিবেদন কঠিন হয়ে পড়ে। যথাসাধ্য চেষ্টা করুন যাতে তা নিয়মিত করা যায়। তবে জলখাবার, মধ্যাহ্ন ভোজ বা নৈশ ভোজ যা-ই আপনারা রান্না করছেন, তা অবশ্যই নিবেদন করে খাবেন। ভোগ নিবেদন হয়ে গেলেই সকলে প্রসাদ পেতে পারেন। তবে যিনি নিবেদন করছেন, তিনি যেন আরতি কিংবা ধূপ নিবেদন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রসাদ না পান। নিবেদনের খালা থেকে সরাসরি প্রসাদ গ্রহণ নিষিদ্ধ। প্রসাদ এমনভাবে অন্য পাত্রে ঢালুন যাতে আমাদের ব্যবহার্য পাত্রের সঙ্গে না ঠেকে।
