স্ত্রী সঙ্গ

 স্ত্রী সঙ্গ

স্ত্রী সঙ্গ

"নারী আগুন এবং পুরুষ ঘৃতপাত্রের সাথে তুলনীয়। তাই কোন পুরুষের নির্জন স্থানে এমনকি তার কন্যার সংসর্গও এড়িয়ে চলা উচিৎ। একইভাবে অন্যান্য নারীর সাথে মেলামেশাও তার এড়িয়ে চলা উচিৎ। অন্যকোন কারণে নয়, কেবল মাত্র জরুরী প্রয়োজনেই পুরুষের উচিৎ নারীর সাথে মেলামেশা করা।" (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/১২/৯) শ্রীল প্রভুপাদের ব্যাখ্যাঃ- 'যদি একটি ঘিয়ের বাটি এবং আগুন একত্রে রাখা হয় তবে বাটির মধ্যকার ঘি অবশ্যই গলে যাবে। নারীকে আগুনের সাথে এবং পুরুষকে বিয়ের সাথে তুলনা করা হয়। কোন পুরুষ ইন্দ্রিয় সংযমের ক্ষেত্রে যতদূরই অগ্রসর হোক না কেন একজন নারীর সামনে নিজেকে সংযত রাখা তারপক্ষে প্রায় অসম্ভব। সে নারী নিজের মেয়ে, মা অথবা বোন হলেও একই কথা প্রযোজ্য। সন্ন্যাস গ্রহণকারী ব্যক্তিও সময়বিশেষে উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন। তাই বৈদিক সভ্যতা সতর্কতার সাথে পুরুষ ও নারীর মেলামেশার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যদি কেউ নারী ও পুরুষের মেলামেশা সীমিত রাখার মৌলিক নীতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয় তবে সে পশুর সাথে তুলনীয়।

“জড় জগতের অস্তিত্বের মূলনীতি হচ্ছে পুরুষ ও নারীর মধ্যেকার আকর্ষন। এই প্রাপ্তধারণার বশবর্তী হয়ে পুরুষ ও নারীর হৃদয় পরস্পরের কাছাকাছি আসে এবং একে অপরের শরীর, বাড়ী, সম্পত্তি, সন্তান, আত্মীয় ও সম্পদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে এভাবে মানুষের জীবনে মায়ার বন্ধন বাড়তে থাকে এবং মানুষ চিন্তা করে 'অহং মমেতি' - আমি এবং আমার " (শ্রীমদ্ভাগবত- ৫/৫/৮)।

বৈদিক সংস্কৃতিতে ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থ অবলম্বনকারী এবং সন্ন্যাসীদের বেলায় নারীর সাথে ব্যপক মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র গৃহস্থদেরকে নারীর সাথে মেলামেশার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে তাদের বেলাতেও বিধিনিষেধ আছে। নারীর প্রতি অনাসক্ত হওয়া ছাড়া আধ্যাত্মিক জীবনে অগ্রগতি অসম্ভব।

গৃহস্থদের জন্য অবশ্য যৌনজীবন অনুমোদিত। তবে তা কেবল মাত্র সন্তান জন্মদেয়ার জন্য। শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী গুরুর নিকট থেকে আজ্ঞা লাভের পর গৃহস্থ যৌনজীবন যাপন করে নারীর ঋতুজাবের পর স্বামী স্ত্রী মিলিত হবার উপযুক্ত সময়। স্বামী স্ত্রী গর্ভাধানসংস্কার পালন করে পরস্পর মিলিত হয়ে থাকে। গর্ভাধান সংস্কার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মিলিত হবার আগে দম্পতির মনে পবিত্রতার সঞ্চার ঘটে। মিলিত হবার সময় দম্পতির মানসিক অবস্থা অনুসারে বিশেষ ধরণের জীব গর্ভে আকৃষ্ট হয়। পশুদের যৌনমিলন শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়তৃপ্তির লক্ষ্যে পরিচালিত। মানুষও যদি একই ধারা অনুসরণ করে তবে কোন ধরণের সন্তান জন্ম নিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তাই যৌন জীবনে মিলিত হবার আগে পিতামাতাকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হয়।

গর্ভাধান সংস্কার অত্যন্ত জটিল বৈদিক প্রক্রিয়া। তাই শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর বিবাহিত শিষ্যদের জন্য এই বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন যে মিলনে রত হবার আগে তারা মনকে পবিত্র করার জন্য ৫০ মালা ( ৫০ X ১০৮) হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করবে নারী গর্ভবতী থাকাকালে অথবা সন্তান জন্মদেয়ার ৬ মাস সময় পর্যন্ত যৌন সঙ্গ করা উচিৎনয়। এমন কি জন্মনিরোধক ব্যবহার করেও নয়। বিবাহিত জীবনেও এ সমস্ত সীমা লংঘন করলে তা অবৈধ যৌনাচার হিসাবে গণ্য হয় এবং তা কৃষ্ণভাবনার নীতিবিরুদ্ধ।

Popular posts from this blog

শ্রীগুরু বন্দনা

প্রথম অধ্যায়- অর্জুন বিষাদ-যোগ

শ্রীশ্রীগৌর-আরতি