বৈষ্ণবের সাধারণ ব্যবহার
বৈষ্ণবের সাধারণ ব্যবহার
কৃষ্ণভাবনামৃত সম্পূর্ণরূপে ত্রিগুনাতীত। পার্থিব বস্তু জগতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। একজন শুদ্ধ বৈষ্ণব দেহত্যাগের পর সরাসরি আধ্যাত্মিক জগতে চলে যান। কিন্তু মুক্ত ও নবীন নির্বিশেষে সকল বৈষ্ণবকেই এই পার্থিব জগতে বসবাস করতে হয়। যদিও ভক্তির প্রশ্নে বৈষ্ণব কখনও আপোষ করে না তবুও শাস্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপনের স্বার্থে সাধারণ আচরণের ব্যাপারে তাঁর উদাসীন থাকা উচিৎ নয়।
বিশেষতঃ অধিকাংশ ভক্ত গার্হস্থ আশ্রমে অবস্থান করেন। তাদের অনেক পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। বৈষ্ণব হতে হলে অবশ্যই সন্ন্যাসী হতে হবে এ ধারণ ভুল। গৃহস্থ থেকেও যে কোন ব্যক্তি কৃষ্ণসেবা করতে পারেন। যেমন ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলেনঃ “গৃহে থাক বনে থাক সদা হরি বলে ডাক”।
অবশ্য একথা ভাবা ঠিক নয় যে কেবল সন্ন্যাসীদেরকেই কঠোর নীতি পালন করতে হবে। গৃহস্থদেরকেও অবশ্যই নিষ্পাপ জীবন যাপন করতে হবে। অর্থাৎ কৃষ্ণ প্রসাদ গ্রহণ, আমিষ বর্জন, ইন্দ্রিয় দমন, ইত্যাদি। সমাজে স্বাভাবিক কারণেই শ্রম বিভাগ রয়েছে। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সৈনিক, কৃষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কারিগর, ইঞ্জিনিয়ার, ইত্যাদি সকলের প্রয়োজন সমাজে আছে। যে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, যে কেউ কৃষ্ণ সেবা করতে পারে।
“কিবা বিপ্ৰ কিবা শুধু কি পুরুষ নারী। কৃষ্ণ ভজনে হয় সবাই অধিকারী।।”
একজন বৈষ্ণব সৎপথে থেকে তার জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহ করে এবং কারও উপর বোঝা হয়ে থাকে না। সে একজন আদর্শ নাগরিক খাঁটি সাদাসিধা এবং ধর্মপ্রাণও বটে। পেশার ক্ষেত্রেও বৈষ্ণব সর্বদা পাপাচার থেকে দূরে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ সে কোন অবস্থাতেই কসাই এর কাজ করবেন না।
কোন কোন ক্ষেত্রে দুষ্কর্মের জন্য সৃষ্ট দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে কোন কোন লোক অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং তারা পাপাচার করতে বাধ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ আমরা দেখি যে মৎসজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায়ই হরিনাম কীর্তনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারা প্রায় সকলেই অত্যন্ত গরীব এবং মাছ ধরার মত হীন কাজ করে দিনান্তে কোন মতে বেঁচে থাকে। তারা খাঁটি বৈষ্ণব হবার ব্যাপারে প্রকৃতই আগ্রহী হলে আমরা বলব যদি সম্ভব হয় তবে তাদের এ পেশা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। যদি তা একেবারেই সম্ভব না হয় তাহলেও তাদের নিরাশ হয়ে হরিনাম কীর্তনের প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিৎ হবে না। বরং নিজেদেরকে অত্যন্ত পতিত ও অভাগা ভেবে তারা অন্তরের গভীর থেকে আকুল হৃদয়ে প্রার্থনা করলে কৃষ্ণ অবশ্যই তাদের প্রতি কৃপা করবেন।
ভানেকে বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এর সব নিয়ম কানুন মেনে চলা তারা কঠিন মনে করে। তবে এরা ধীরে ধীরে এসব নিয়ম কানুন মেনে চলার অভ্যাস করতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ – কোন ব্যক্তি সপ্তাহে ৭ দিন আমিষ খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত। তার উচিৎ হবে সপ্তাহে প্রথমে ৬ দিন, পরে ৫ দিন এভাবে আমিষ খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে আনা, যে পর্যন্ত তা পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে যায়। অবশ্য মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে একেবারে চিরদিনের জন্য আমিষ খাদ্য বর্জন করা সব চেয়ে ভাল। কারণ মাসে একবার আমিষ খাদ্য গ্রহণ করলেও তা কৃষ্ণ ভাবনার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করে।