কাকে দান করা উচিত ?
📕কাকে দান করা উচিত❓
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, দানের ফল পরকালে বর্তায়। সাধুকে কিছু দান করলে আত্ম কল্যাণ হয়, অসাধুকে কিছু দান করলে নিষ্ফল হয় এবং অপাত্রে দান করলে অমঙ্গলই লাভ হয়।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, যদি কিছু প্রীতিপূর্ণভাবে দান করতে চাও, তবে আমাকেই দান কর। দদাসি যৎ....তৎ মদর্পণম্---তোমার দানের বস্তু আমার প্রতি অর্পণ কর।
সপ্তদশ অধ্যায়ে ২০, ২১ ও ২২ শ্লোকে দান সম্পর্কে ভগবানের উক্তি লক্ষ্যণীয়। সেখানে তিন রকমের দানের কথা বলা হয়েছে।
- দান করা কর্তব্য বলে মনে করে, প্রত্যূপকারের আশা না করে উপযুক্ত স্থানে (মন্দিরে, তীর্থে), উপযুক্ত সময়ে (পর্ব বা পবিত্র তিথিতে), উপযুক্ত পাত্রে (বৈষ্ণবজনকে) যে দান করা হয়, তাকে সাত্ত্বিক দান বলে।
- প্রত্যুপকারের আশা করে, ফল লাভের উদ্দেশ্যে, অনুতাপ সহকারে যে দান করা হয়, সেই দান রাজসিক।
- ইন্দ্রিয় তোষণের জন্য, অশুভ স্থানে, অশুভ কালে, অযোগ্য পাত্রে যে দান করা হয়, তাকে তামসিক দান বলে।
মহাভারতে উদ্যোগ পর্বে ৩৬ অধ্যায়ে মহামতি বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে বলছেন, ছয় রকম ব্যক্তিকে কিছুই দান করা উচিত নয়, তাদের সেবা করা কর্তব্য নয়। যেমন---
- ★ আততায়ী (গৃহদাহকারী, বিষপ্রয়োগকারী, ভূমি-দার- অর্থাদি অপহরণকারী, প্রাণনাশাদি অনিষ্ট সাধনে যে তৎপর),
- ★ অতি প্রমাদী,
- ★ স্নেহশুন্য,
- ★ নিয়ত মিথ্যাবাদী,
- ★ ভগবদ্ভক্তি শূন্য,
- ★ নিপুণমন্য বা আত্মগড়িমাকারী।
শ্রীবিদুর আরও বলেছেন, নয় ধরনের ব্যক্তির কাছে কিছু ভিক্ষা করা উচিত নয়। যারা---
- ★ কৃপণ (কাউকে কিছুই দান করতে চায় না),
- ★ শাপপ্রদ (কথায় কথায় অভিশাপ দিয়ে থাকে),
- ★ মূর্খ (দান করে অনুশোচনা করে),
- ★ ধূর্ত (দানের ছলে অসৎ অভিসন্ধি পোষণ করে),
- ★ কৈবর্ত (জীবহত্যাকারী তথা নিম্নশ্রেনীর লোক),
- ★ মানী ব্যক্তির অবমন্তা (সস্মানীয় ব্যক্তিকে অবজ্ঞা করে),
- ★ নিষ্ঠুর,
- ★ শত্রুভাবাপন্ন, এবং
- ★ কৃতঘ্ন (বিশ্বাসঘাতক)
এই নয় ধরনের ব্যক্তির কাছে কিছু ভিক্ষা করা উচিত নয়।
মহাভারতে উদ্যোগপর্বে ৩৭ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যার ক্রোধ নেই, পাথর ও সোনাতে যাঁর সমজ্ঞান, যাঁর শোক নেই, সন্ধি ও বিগ্রহ (কলহ) নেই,
নিন্দা-প্রশংসায় যিনি উপেক্ষা প্রদর্শন করেন, উদাসীনের মতো যিনি প্রিয় ও অপ্রিয় বিষয় পরিত্যাগ করেন--সেই ভিক্ষুককে দান করা গৃহস্থের একান্ত কর্ম।